সময়: 10/31/2025

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ ট্রান্সফার (TC) করার সম্পূর্ণ নিয়ম

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ ট্রান্সফার

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে পড়াশোনা করা হাজারো শিক্ষার্থী প্রতি বছর নানা কারণে এক কলেজ থেকে অন্য কলেজে ট্রান্সফার বা কলেজ পরিবর্তন করার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন। অনেক সময় রিলিজ স্লিপে বাধ্য হয়ে দূরবর্তী কলেজে ভর্তি হতে হয়, আবার কখনো পরিবার স্থানান্তর, অভিভাবকের চাকরি বদলি, বিয়ে বা অন্যান্য মানবিক কারণে কলেজ পরিবর্তনের দরকার হয়। কিন্তু অনেক শিক্ষার্থীই জানেন না কীভাবে সঠিক নিয়মে এবং সহজভাবে কলেজ ট্রান্সফার বা টিসি (Transfer Certificate - TC) নেওয়া যায়।​

এই সম্পূর্ণ গাইডে আমরা আপনাকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজ ট্রান্সফার সংক্রান্ত সব কিছু জানাব— টিসি কী, কারা আবেদন করতে পারবেন, কোন কোন কারণে টিসি পাওয়া যায়, কী কী কাগজপত্র লাগবে, কীভাবে ধাপে ধাপে অনলাইনে আবেদন করতে হবে, খরচ কত, এবং টিসি সংক্রান্ত যাবতীয় প্রশ্নের উত্তর। এই পোস্টটি পড়লে আপনি A থেকে Z পর্যন্ত সব তথ্য পেয়ে যাবেন এবং নিশ্চিন্তে কলেজ ট্রান্সফারের প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে পারবেন।​

কলেজ ট্রান্সফার (TC) কী এবং কেন প্রয়োজন হয়?

কলেজ ট্রান্সফার বা TC (Transfer Certificate) হলো এমন একটি প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে একজন শিক্ষার্থী তার বর্তমান কলেজ থেকে ছাড়পত্র নিয়ে অন্য একটি কলেজে স্থানান্তরিত হতে পারেন এবং সেখানে পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারেন। এটি মূলত একটি অফিসিয়াল অনুমতিপত্র যা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ প্রদান করে থাকে।​

কলেজ ট্রান্সফারের প্রয়োজনীয়তা কেন হয়?

শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন যৌক্তিক ও মানবিক কারণে কলেজ পরিবর্তনের প্রয়োজন হতে পারে:​

  • ভর্তির সময় রিলিজ স্লিপের কারণে: অনেক শিক্ষার্থী প্রথম পছন্দের কলেজে সিট না পেয়ে রিলিজ স্লিপে অন্য কলেজে ভর্তি হতে বাধ্য হন। পরবর্তীতে তারা নিজের পছন্দের কলেজে যেতে চান।
  • অভিভাবকের চাকরি বদলি: পিতা বা মাতা সরকারি, আধা-সরকারি বা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে চাকরিরত থাকলে এবং তাদের বদলি হলে পরিবারের সাথে শিক্ষার্থীকেও স্থানান্তরিত হতে হয়।​
  • মেয়ে শিক্ষার্থীদের বিয়ে: বিয়ের পর স্বামীর কর্মস্থল বা বাসস্থানের কাছে কলেজে পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার জন্য কলেজ পরিবর্তন প্রয়োজন হয়।​
  • স্থায়ী ঠিকানার কাছে পড়তে চাইলে: অনেক শিক্ষার্থী তাদের স্থায়ী ঠিকানার কাছের কোনো কলেজে পড়তে চান যাতে পরিবারের কাছে থেকে পড়াশোনা করা যায়।​
  • পরিবার স্থানান্তর বা মানবিক কারণ: অভিভাবকের মৃত্যু, প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী, কলেজের অধিভুক্তি বাতিল ইত্যাদি বিশেষ কারণেও কলেজ পরিবর্তন করতে হতে পারে।​

এই সকল কারণে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের জন্য একটি নির্দিষ্ট নিয়ম এবং প্রক্রিয়া তৈরি করেছে যাতে যৌক্তিক কারণে তারা কলেজ পরিবর্তন করতে পারেন।​

টিসি (TC) আবেদনের যোগ্যতা ও শর্তাবলী

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজ ট্রান্সফারের জন্য আবেদন করতে হলে শিক্ষার্থীকে নির্দিষ্ট কিছু শর্ত পূরণ করতে হবে। এই শর্তগুলো বুঝে নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ শর্ত পূরণ না হলে আবেদন বাতিল হয়ে যেতে পারে।​

কারা টিসি আবেদন করতে পারবেন?

যোগ্যতার শর্তাবলী:

  • অনার্স ১ম বর্ষের পরীক্ষার পর: অনার্স ১ম বর্ষের ফাইনাল পরীক্ষা শেষ করে রেজাল্ট প্রকাশিত হলে এবং "Promoted" (প্রমোটেড) হলে ২য় বর্ষে উঠার আগে টিসির জন্য আবেদন করা যায়।​
  • ২য় বর্ষের পরীক্ষার পর: অনার্স ২য় বর্ষের পরীক্ষার পর প্রমোটেড হলে ৩য় বর্ষে যাওয়ার আগে আবেদন করা যায়।​
  • ৩য় বর্ষে সীমিত সুযোগ: অনার্স ৩য় বর্ষে বিশেষ কারণ ছাড়া টিসি নেওয়া যায় না। শুধুমাত্র অভিভাবকের বদলি বা মেয়ে শিক্ষার্থীর বিয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ কারণে বিবেচনা করা হতে পারে।​​
  • ৪র্থ বর্ষে সাধারণত অনুমোদন হয় না: অনার্স ৪র্থ বর্ষে খুবই বিশেষ এবং জরুরি কারণ ছাড়া কলেজ ট্রান্সফার অনুমোদন করা হয় না।​
  • ডিগ্রি শিক্ষার্থীরা: ডিগ্রি কোর্সের শিক্ষার্থীরাও একই নিয়মে ১ম বর্ষের পরীক্ষার পর টিসির জন্য আবেদন করতে পারবেন।​

কারা টিসি আবেদন করতে পারবেন না?

নিম্নলিখিত ক্ষেত্রে টিসি আবেদন করা যাবে না:

  • অনার্স ১ম বর্ষে থাকা অবস্থায়: অনার্স ১ম বর্ষে ভর্তি হওয়ার পরপরই কিংবা ১ম বর্ষের পরীক্ষার আগে টিসির আবেদন করা যায় না।​
  • একই জেলা বা বিভাগীয় শহরের মধ্যে: শিক্ষার্থী যে জেলা বা বিভাগীয় শহরে বর্তমানে পড়াশোনা করছে, একই জেলা বা বিভাগীয় শহরের অন্য কোনো কলেজে ট্রান্সফারের জন্য আবেদন করতে পারবে না। তবে, মেয়ে শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে বিয়ের কারণে এই শর্ত শিথিল করা যায়।​
  • বেসরকারি থেকে সরকারি কলেজে: বেসরকারি কলেজ থেকে সরকারি কলেজে ট্রান্সফার নেওয়া যায় না। তবে সরকারি কলেজ থেকে সরকারি বা বেসরকারি এবং বেসরকারি থেকে বেসরকারি কলেজে যাওয়া যায়।​
  • রিলিজ স্লিপে ভর্তি হওয়া কলেজে ফিরতে চাইলে: যদি কোনো শিক্ষার্থী ভর্তির সময় একটি কলেজে চান্স পেয়েও রিলিজ স্লিপে অন্য কলেজে ভর্তি হয়ে থাকেন, তাহলে পরবর্তীতে সেই আগের কলেজে বা সমমানের কলেজে ট্রান্সফারের জন্য আবেদন করতে পারবেন না।​
  • ফাইনাল পরীক্ষার ফরম ফিলাপ শুরু হলে: যদি কোর্সের চূড়ান্ত পরীক্ষার ফরম পূরণ শুরু হয়ে যায়, তাহলে টিসি ইস্যু করা হয় না।​
  • "Not Promoted" হলে: যদি কোনো শিক্ষার্থী পরীক্ষায় "Not Promoted" হন, তাহলে সাধারণত টিসির জন্য আবেদন করতে পারবেন না। তবে পরবর্তী বছর পরীক্ষা দিয়ে "Promoted" হলে তখন আবেদন করতে পারবেন।​

রেজাল্ট বা CGPA সংক্রান্ত শর্ত

  • প্রমোশন বাধ্যতামূলক: টিসির জন্য আবেদন করতে হলে শিক্ষার্থীকে অবশ্যই সংশ্লিষ্ট বর্ষের পরীক্ষায় প্রমোটেড (Promoted) হতে হবে।​
  • কোনো নির্দিষ্ট CGPA শর্ত নেই: জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মে টিসির জন্য নির্দিষ্ট কোনো CGPA বা মিনিমাম গ্রেড পয়েন্টের শর্ত উল্লেখ নেই। শুধুমাত্র প্রমোশন পেলেই যথেষ্ট।​
  • ফেল থাকা অবস্থায়: যদি কোনো বিষয়ে ফেল থাকা সত্ত্বেও প্রমোশন পাওয়া যায়, তাহলে টিসির জন্য আবেদন করা যাবে।​

আবেদনের সময়সীমা

  • রেজাল্ট প্রকাশের পর থেকে ৪৫ দিন: প্রতি বর্ষের চূড়ান্ত পরীক্ষার ফল প্রকাশের পর থেকে শুরু করে ৪৫ দিনের মধ্যে অনলাইনে প্রাথমিক টিসি আবেদন করতে হবে। এই সময়সীমা অতিক্রম হলে আবেদনের সুযোগ থাকবে না।​

যেসব যৌক্তিক কারণে টিসি আবেদন গৃহীত হয়

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ খুবই সতর্কতার সাথে টিসি আবেদন যাচাই করে এবং শুধুমাত্র যৌক্তিক ও প্রমাণযোগ্য কারণে টিসি অনুমোদন দেয়। মামুলি বা তুচ্ছ কারণে টিসি পাওয়া যায় না। নিচে সেই সব প্রধান কারণ উল্লেখ করা হলো যেগুলোর ভিত্তিতে টিসি আবেদন বিবেচিত হয়।​

১. অভিভাবকের চাকরি বদলি (বিশেষত সরকারি)

এটি সবচেয়ে সাধারণ এবং গ্রহণযোগ্য কারণ। যদি শিক্ষার্থীর পিতা, মাতা বা আইনগত অভিভাবক সরকারি, আধা-সরকারি বা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে চাকরিরত থাকেন এবং তাদের চাকরির কারণে এক জেলা থেকে অন্য জেলায় বদলি হয়, তাহলে শিক্ষার্থী টিসির জন্য আবেদন করতে পারবেন।​

প্রয়োজনীয় প্রমাণপত্র:

  • অভিভাবকের বদলির আদেশপত্র (Transfer Order)​
  • নতুন কর্মস্থলে যোগদান পত্র (Joining Letter)​
  • অভিভাবকের চাকরির পরিচয়পত্র বা সার্ভিস বুক​
  • অভিভাবকের জাতীয় পরিচয়পত্র (NID)​
  • অভিভাবকের সম্মতিপত্র​

গুরুত্বপূর্ণ নোট: শুধুমাত্র সরকারি, আধা-সরকারি এবং স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের চাকরিজীবীদের বদলির কারণে টিসি দেওয়া হয়। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকরিজীবীদের ক্ষেত্রে বদলির কারণ সাধারণত গ্রহণযোগ্য নয়।​

২. মেয়ে শিক্ষার্থীর বিয়ে

অনার্স ক্লাসে ভর্তি হওয়ার পর যদি কোনো মেয়ে শিক্ষার্থীর বিয়ে হয় এবং বিয়ের পর স্বামীর জেলা, কর্মস্থল বা বসবাসের স্থানে স্থানান্তরিত হয়ে পড়াশোনা চালিয়ে যেতে চান, তাহলে তিনি কলেজ পরিবর্তনের জন্য আবেদন করতে পারবেন।​

প্রয়োজনীয় প্রমাণপত্র:

  • নিকাহনামা বা কাবিননামা (মুসলিম বিয়ের ক্ষেত্রে)​
  • হিন্দু, খ্রিস্টান ও বৌদ্ধ ধর্মের ক্ষেত্রে প্রথম শ্রেণির গেজেটেড কর্মকর্তা, ইউনিয়ন কাউন্সিলের চেয়ারম্যান বা ওয়ার্ড কাউন্সিলর কর্তৃক প্রদত্ত বিয়ের সার্টিফিকেট​
  • স্বামীর কর্মস্থল বা বসবাসের ঠিকানার প্রমাণপত্র​
  • স্বামীর জাতীয় পরিচয়পত্র​
  • স্বামী যে প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন সেখানের চাকরির সনদপত্র বা যোগদান পত্র​
  • স্বামী-স্ত্রীর যৌথ ছবি এবং বিয়ের আমন্ত্রণপত্র​

বিশেষ সুবিধা: মেয়ে শিক্ষার্থীরা বিয়ের কারণে একই জেলা বা বিভাগীয় শহরের মধ্যেও কলেজ পরিবর্তন করতে পারবেন, যেখানে অন্যদের ক্ষেত্রে এই সুবিধা নেই।​

৩. অভিভাবকের মৃত্যু

শিক্ষার্থীর পিতা বা মাতার মৃত্যু হলে এবং সেই কারণে নতুন অভিভাবকের কাছে অথবা অন্য জেলায় স্থানান্তরিত হতে হলে টিসির জন্য আবেদন করা যায়।​

প্রয়োজনীয় প্রমাণপত্র:

  • মৃত্যু সনদ (Death Certificate) বা স্থানীয় চেয়ারম্যানের প্রত্যয়নপত্র​
  • বর্তমান অভিভাবকের সম্মতিপত্র​
  • নতুন অভিভাবকের পেশা ও কর্মস্থল সংক্রান্ত কাগজপত্র​
  • নতুন অভিভাবকের জাতীয় পরিচয়পত্র (NID)​

৪. স্থায়ী ঠিকানার কাছের কলেজে পড়তে চাইলে

শিক্ষার্থী যদি তার বা তার অভিভাবকের স্থায়ী ঠিকানার কাছের কোনো কলেজে পড়তে চান, তাহলে এই কারণ দেখিয়ে টিসির জন্য আবেদন করা যায়।​

প্রয়োজনীয় প্রমাণপত্র:

  • শিক্ষার্থী নিজের, পিতা বা মাতার জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি (যেখানে স্থায়ী ঠিকানা উল্লেখ আছে)​
  • স্থানীয় চেয়ারম্যানের প্রত্যয়নপত্র (Address Verification)​

৫. প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী

যদি কোনো শিক্ষার্থী শারীরিক বা মানসিক প্রতিবন্ধী হন এবং সেই কারণে বর্তমান কলেজে পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়া কঠিন হয়, তাহলে টিসির জন্য আবেদন করতে পারবেন।​

প্রয়োজনীয় প্রমাণপত্র:

  • সমাজকল্যাণ দপ্তরের প্রতিবন্ধী সনদ​

৬. কলেজের অধিভুক্তি স্থগিত বা বাতিল হলে

যদি শিক্ষার্থী যে কলেজে পড়ছেন সেই কলেজের শিক্ষাকার্যক্রম বা নির্দিষ্ট বিষয়ের অধিভুক্তি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক স্থগিত বা বাতিল করা হয়, তাহলে শিক্ষার্থী অন্য কলেজে ট্রান্সফারের জন্য আবেদন করতে পারবেন।​

প্রয়োজনীয় প্রমাণপত্র:

  • জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজ পরিদর্শন শাখা কর্তৃক প্রদত্ত অধিভুক্তি বাতিলের পত্র​

যেসব কারণ গ্রহণযোগ্য নয়

  • শুধুমাত্র ভালো কলেজে যাওয়ার ইচ্ছা (academic ambition) কোনো গ্রহণযোগ্য কারণ নয়
  • বন্ধুদের সাথে থাকার ইচ্ছা বা ব্যক্তিগত পছন্দ
  • কলেজের শিক্ষকদের সাথে সমস্যা বা ব্যক্তিগত বিরোধ
  • পরীক্ষার ফলাফল খারাপ হওয়া
  • কোনো ডকুমেন্ট প্রমাণ ছাড়া শুধু মৌখিক কারণ

কলেজ ট্রান্সফারের পূর্ণাঙ্গ প্রক্রিয়া (ধাপে ধাপে)

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজ ট্রান্সফার প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ অনলাইনভিত্তিক এবং স্বচ্ছ। নিচে ধাপে ধাপে সম্পূর্ণ প্রক্রিয়া বর্ণনা করা হলো যাতে আপনি সহজেই বুঝতে এবং অনুসরণ করতে পারেন।​

ধাপ ১: বর্তমান কলেজ থেকে করণীয়

টিসি প্রক্রিয়া শুরু করার আগে আপনাকে অবশ্যই আপনার বর্তমান কলেজের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।​

করণীয়:

  • আপনার বিভাগীয় প্রধান (Head of Department) এর সাথে দেখা করুন এবং কলেজ পরিবর্তনের ইচ্ছা ও কারণ জানান​
  • বিভাগীয় প্রধান থেকে অনুমোদন নিয়ে কলেজের অধ্যক্ষের সাথে দেখা করুন​
  • অধ্যক্ষের কাছে একটি লিখিত আবেদনপত্র জমা দিন যেখানে টিসি নেওয়ার কারণ স্পষ্টভাবে উল্লেখ করবেন​
  • কলেজ অফিস থেকে টিসি ফরম সংগ্রহ করুন​
  • নিশ্চিত করুন যে আপনার কলেজে বকেয়া কোনো টাকা নেই (দেখুন ধাপ ৭)​

গুরুত্বপূর্ণ: বর্তমান কলেজের অধ্যক্ষের সুপারিশ পাওয়া জরুরি।​

ধাপ ২: কাঙ্ক্ষিত কলেজ (Target College) থেকে অনাপত্তি পত্র (NOC) সংগ্রহ

এটি টিসি প্রক্রিয়ার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। আপনি যে কলেজে ট্রান্সফার নিতে চান সেই কলেজ থেকে আগে থেকেই অনাপত্তি পত্র (No Objection Certificate - NOC) সংগ্রহ করতে হবে।​

NOC সংগ্রহের পদ্ধতি:

ক) সরাসরি কলেজে যোগাযোগ:

  • যে কলেজে যেতে চান সেই কলেজের অধ্যক্ষের সাথে সাক্ষাৎ করুন​
  • আপনার টিসির বিষয়টি ব্যাখ্যা করুন এবং আসন খালি আছে কিনা জিজ্ঞাসা করুন​
  • আপনার রেজিস্ট্রেশন কার্ড, মার্কশিট, এবং টিসির কারণ সংক্রান্ত কাগজপত্র দেখান​
  • কলেজ কর্তৃপক্ষ যাচাই করে দেখবে যে আপনার বিষয়ে আসন খালি আছে কিনা​
  • যদি আসন খালি থাকে এবং কলেজ কর্তৃপক্ষ সম্মত হন, তাহলে তারা আপনাকে একটি অনাপত্তি পত্র (NOC) প্রদান করবেন​

খ) NOC-তে কী থাকবে:

  • কাঙ্ক্ষিত কলেজের নাম ও কোড
  • আপনার নাম, রেজিস্ট্রেশন নম্বর
  • বিষয়ে খালি আসন আছে মর্মে সত্যায়ন
  • অধ্যক্ষের স্বাক্ষর ও সিল

গুরুত্বপূর্ণ নোট:

  • যদি কাঙ্ক্ষিত কলেজে আপনার বিষয়ে শিক্ষার্থী-শিক্ষক অনুপাত (Student-Teacher Ratio) অতিরিক্ত হয়, তাহলে আপনার আবেদন প্রত্যাখ্যান হতে পারে​
  • যদি আসন পূর্ণ থাকে, তাহলে NOC পাওয়া যাবে না​

ধাপ ৩: জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টুডেন্ট পোর্টালে রেজিস্ট্রেশন

টিসির জন্য অনলাইনে আবেদন করতে হলে আপনাকে প্রথমে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টুডেন্ট পোর্টালে একটি একাউন্ট তৈরি করতে হবে (যদি আগে থেকে না থাকে)।​

রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া:

ধাপ ১: জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট  www.nu.ac.bd বা www.nubd.info এ যান।​

ধাপ ২: মূল পাতায় "Services" মেনুতে ক্লিক করুন।​

ধাপ ৩: "Student Login" অপশনে ক্লিক করুন।​

ধাপ ৪: যদি আপনার আগে থেকে একাউন্ট না থাকে, তাহলে "Register" বা "Sign Up" বাটনে ক্লিক করুন।​

ধাপ ৫: রেজিস্ট্রেশন ফরমে নিম্নলিখিত তথ্য পূরণ করুন:

  • আপনার পূর্ণ নাম
  • রেজিস্ট্রেশন নম্বর (অনার্স/ডিগ্রি)
  • মোবাইল নম্বর (সক্রিয়)
  • ইমেইল অ্যাড্রেস
  • পাসওয়ার্ড তৈরি করুন
  • SSC রোল নম্বর ও পাশের সাল
  • HSC রোল নম্বর ও পাশের সাল​

ধাপ ৬: সব তথ্য সঠিকভাবে পূরণ করে "Submit" বাটনে ক্লিক করুন।

ধাপ ৭: রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন হলে আপনার মোবাইলে একটি নিশ্চিতকরণ SMS আসবে।

ধাপ ৮: এরপর আপনার User ID এবং Password দিয়ে লগইন করুন।​

ধাপ ৪: অনলাইনে টিসি (TC) আবেদন ফরম পূরণ

লগইন করার পর এখন আপনি টিসির জন্য অনলাইনে আবেদন করতে পারবেন।​

আবেদন প্রক্রিয়া:

ধাপ ১: লগইন করার পর "Academic Services" মেনুতে যান।​

ধাপ ২: "Services List" এ ক্লিক করুন।​

ধাপ ৩: বিভিন্ন সেবার লিস্ট থেকে "Transfer College (TC)" অপশন খুঁজে বের করুন এবং সেটিতে ক্লিক করুন।​

ধাপ ৪: একটি আবেদন ফরম খুলবে। সেখানে নিম্নলিখিত তথ্য পূরণ করুন:

  • Target College Name: যে কলেজে যেতে চান সেই কলেজের নাম ড্রপডাউন মেনু থেকে সিলেক্ট করুন। সঠিক কলেজ নাম এবং কলেজ কোড নির্বাচন করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।​
  • Current College Name: আপনার বর্তমান কলেজের নাম (সাধারণত অটোমেটিক আসবে)​
  • Subject/Department: আপনার বিষয় বা ডিপার্টমেন্ট​
  • Current Year: বর্তমানে আপনি কোন বর্ষে আছেন (যেমন: ২য় বর্ষ, ৩য় বর্ষ)​
  • Reason for Transfer (TC-এর কারণ): এখানে আপনার টিসি নেওয়ার সঠিক এবং স্পষ্ট কারণ লিখুন। যেমন: "অভিভাবকের চাকরি বদলি", "বিয়ে", "স্থায়ী ঠিকানার কাছে" ইত্যাদি।​
  • Contact Number: আপনার সক্রিয় মোবাইল নম্বর​

ধাপ ৫: সকল তথ্য সঠিকভাবে পূরণ করুন এবং ভালোভাবে চেক করুন।

গুরুত্বপূর্ণ: এই পর্যায়ে আবেদন শুধুমাত্র প্রাথমিক (Preliminary) আবেদন হিসেবে জমা হবে।​

ধাপ ৫: প্রয়োজনীয় কাগজপত্র আপলোড

আবেদন ফরম পূরণ করার পর আপনাকে প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট স্কান কপি হিসেবে আপলোড করতে হবে।​

যেসব ডকুমেন্ট আপলোড করতে হবে:

  • অনলাইন আবেদন ফরমের প্রিন্ট কপি​
  • রেজিস্ট্রেশন কার্ডের স্ক্যান কপি​
  • প্রবেশপত্র (Admit Card) এর স্ক্যান কপি​
  • রেজাল্ট শিট/মার্কশিটের অনলাইন কপি​
  • বর্তমান কলেজের অধ্যক্ষের সুপারিশপত্র (যদি থাকে)​
  • কাঙ্ক্ষিত কলেজের NOC (অনাপত্তি পত্র)​
  • টিসির কারণ সংক্রান্ত প্রমাণপত্র (যেমন: বাবার বদলির আদেশপত্র, কাবিননামা, মৃত্যু সনদ ইত্যাদি)​
  • অভিভাবকের ভোটার আইডি কার্ড (পিতা/মাতা/অভিভাবক)​
  • শিক্ষার্থীর নিজের ভোটার আইডি কার্ড (যদি থাকে)​
  • পাসপোর্ট সাইজের ছবি (১ কপি)​
  • স্থানীয় চেয়ারম্যানের প্রত্যয়নপত্র (Address Verification)​
  • অভিভাবকের সম্মতিপত্র​

ফাইল আপলোডের নির্দেশনা:

  • সব ডকুমেন্ট PDF বা JPG ফরম্যাটে স্ক্যান করুন
  • প্রতিটি ফাইলের সাইজ 2 MB এর কম রাখুন
  • ডকুমেন্ট পরিষ্কার এবং পড়ার যোগ্য হতে হবে

ধাপ ৬: আবেদন ফি পেমেন্ট

প্রাথমিক আবেদন যাচাই করার পর জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আপনার মোবাইলে একটি SMS পাঠাবে। এই SMS-এ জানানো হবে আপনার আবেদন বিবেচনাযোগ্য কিনা এবং পরবর্তী ধাপ কী।​

পেমেন্ট প্রক্রিয়া:

ধাপ ১: যদি SMS-এ জানানো হয় যে আপনার আবেদন গ্রহণযোগ্য, তাহলে আপনাকে টিসি আবেদন ফি জমা দিতে হবে।​

ধাপ ২: স্টুডেন্ট পোর্টালে লগইন করে Payment সেকশনে যান।​

ধাপ ৩: টিসি ফি এর পরিমাণ দেখানো হবে (সাধারণত ১০০০-১৫০০ টাকার মধ্যে হতে পারে)।​

ধাপ ৪: "Pay Slip" ডাউনলোড করুন।​

ধাপ ৫: পেমেন্ট করার জন্য কয়েকটি অপশন থাকবে:

ক) সোনালী ব্যাংকের মাধ্যমে:

  • Pay Slip প্রিন্ট করে নিকটস্থ সোনালী ব্যাংকের যেকোনো শাখায় যান​
  • অথবা সোনালী সেবা কেন্দ্রে গিয়ে Pay Slip জমা দিয়ে ফি পরিশোধ করুন​
  • রশিদ সংরক্ষণ করুন​

খ) অনলাইন পেমেন্টের মাধ্যমে:

  • নগদ, বিকাশ, রকেট বা ক্রেডিট/ডেবিট কার্ড দিয়ে অনলাইনে পেমেন্ট করুন​
  • পেমেন্ট সম্পন্ন হলে Transaction ID সংরক্ষণ করুন

ধাপ ৬: পেমেন্ট সম্পন্ন হলে পোর্টালে Transaction ID বা রশিদ নম্বর আপলোড করুন।​

ধাপ ৭: চূড়ান্ত আবেদন সাবমিট

পেমেন্ট সম্পন্ন হওয়ার পর আপনাকে চূড়ান্ত আবেদনপত্র জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে জমা দিতে হবে।​

চূড়ান্ত সাবমিশন প্রক্রিয়া:

ধাপ ১: নির্ধারিত টিসি ফরমটি (কলেজ থেকে সংগৃহীত) সঠিকভাবে পূরণ করুন।​

ধাপ ২: ফরমে কলেজের অধ্যক্ষের স্বাক্ষর ও সিল নিন।​

ধাপ ৩: নিম্নলিখিত কাগজপত্র একসাথে সংযুক্ত করুন:

  • চূড়ান্ত আবেদন ফরম
  • প্রবেশপত্র, রেজিস্ট্রেশন কার্ড, ফলাফলের সত্যায়িত কপি​
  • কাঙ্ক্ষিত কলেজের NOC​
  • বর্তমান কলেজের NOC (যদি লাগে)​
  • টিসির কারণের প্রমাণপত্র
  • পেমেন্ট রশিদ
  • অন্যান্য প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট

ধাপ ৪: সব কাগজপত্র নিয়ে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের গাজীপুর ক্যাম্পাসে যান অথবা পোস্টের মাধ্যমে পাঠান।​

ধাপ ৫: বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আবেদন যাচাই করে চূড়ান্ত অনুমোদন দেবে।​

ধাপ ৮: বর্তমান কলেজ থেকে ছাড়পত্র নেওয়া

টিসি অনুমোদিত হওয়ার পর আপনাকে আপনার বর্তমান কলেজ থেকে পূর্ণাঙ্গ ছাড়পত্র নিতে হবে।​

করণীয়:

  • বর্তমান কলেজের সমস্ত বকেয়া টাকা পরিশোধ করুন। বেসরকারি কলেজের ক্ষেত্রে ২য় বা ৩য় বর্ষে ট্রান্সফার করলে সব বছরের বেতন পরিশোধ করতে হতে পারে। তবে নিয়ম অনুযায়ী শুধু চলতি বছরের ছয় (০৬) মাসের বেতন (ফি ব্যতীত) দিতে হয়।​
  • লাইব্রেরি থেকে সব বই ফেরত দিন এবং No Due Certificate নিন​
  • কলেজ অফিস থেকে সব সার্টিফিকেট, মার্কশিট সংগ্রহ করুন​
  • Leaving Certificate/Transfer Certificate নিন​

ধাপ ৯: নতুন কলেজে ভর্তি

ছাড়পত্র নেওয়ার পর আপনি এখন নতুন কলেজে ভর্তি হতে পারবেন।​

ভর্তি প্রক্রিয়া:

  • নতুন কলেজের অধ্যক্ষের সাথে দেখা করুন​
  • জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাওয়া টিসি অনুমোদন পত্র দেখান​
  • নতুন কলেজের ভর্তি ফি এবং অন্যান্য ফি পরিশোধ করুন​
  • SSC এবং HSC সনদপত্রের নতুন ডকুমেন্ট জমা দিন​
  • নতুন কলেজে নিয়মিত ক্লাসে যোগদান শুরু করুন​

গুরুত্বপূর্ণ: মার্কশিট এবং সার্টিফিকেটে নতুন এবং পুরাতন দুই কলেজের নামই উল্লেখ থাকবে, তবে ফাইনাল সার্টিফিকেটে শুধু জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম উল্লেখ থাকবে।​

টিসি (TC) আবেদনের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের সম্পূর্ণ তালিকা

কলেজ ট্রান্সফার বা টিসি আবেদনের জন্য নিচের ডকুমেন্টগুলো প্রয়োজন হবে। সব কাগজপত্র আগে থেকে সংগ্রহ এবং প্রস্তুত রাখলে আবেদন প্রক্রিয়া সহজ এবং দ্রুত হবে।​

মূল ডকুমেন্ট (সবার জন্য আবশ্যক)

  • অনলাইন আবেদন ফরমের প্রিন্ট কপি​
  • রেজিস্ট্রেশন কার্ডের সত্যায়িত ফটোকপি (মূল কপি সাথে রাখুন)​
  • প্রবেশপত্র (Admit Card) এর সত্যায়িত ফটোকপি​
  • সর্বশেষ পরীক্ষার ফলাফল/মার্কশিটের অনলাইন কপি​
  • SSC সনদপত্রের সত্যায়িত ফটোকপি​
  • HSC সনদপত্রের সত্যায়িত ফটোকপি​
  • পাসপোর্ট সাইজের ছবি (সদ্য তোলা, কলেজ অধ্যক্ষ কর্তৃক সত্যায়িত)​
  • শিক্ষার্থীর নিজের জাতীয় পরিচয়পত্র (যদি থাকে) বা জন্মসনদের সত্যায়িত কপি​
  • পিতার জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি​
  • মাতার জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি​

টিসি সংক্রান্ত বিশেষ ডকুমেন্ট

  • বর্তমান কলেজের অধ্যক্ষের সুপারিশসহ আবেদনপত্র (নির্ধারিত ফরমেটে)​
  • কাঙ্ক্ষিত কলেজের অনাপত্তি পত্র (NOC) — এটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ​
  • বর্তমান কলেজের NOC (যদি লাগে)​
  • অভিভাবকের সম্মতিপত্র (নির্ধারিত ফরম্যাটে)​
  • স্থানীয় চেয়ারম্যানের প্রত্যয়নপত্র (Address Verification)​

টিসির কারণ অনুযায়ী অতিরিক্ত ডকুমেন্ট

ক) অভিভাবকের চাকরি বদলির ক্ষেত্রে:

  • বদলির আদেশপত্র (Transfer Order)​
  • যোগদান পত্র (Joining Letter)​
  • অভিভাবকের চাকরির পরিচয়পত্র বা সার্ভিস বুক​
  • অভিভাবকের জাতীয় পরিচয়পত্র​

খ) মেয়ে শিক্ষার্থীর বিয়ের ক্ষেত্রে:

  • নিকাহনামা/কাবিননামা (মুসলিম)​
  • অন্য ধর্মের ক্ষেত্রে বিয়ের সার্টিফিকেট (গেজেটেড অফিসার বা চেয়ারম্যান কর্তৃক প্রদত্ত)​
  • স্বামীর কর্মস্থল/বসবাসের ঠিকানার প্রমাণপত্র​
  • স্বামীর জাতীয় পরিচয়পত্র​
  • স্বামীর চাকরির সনদ বা যোগদান পত্র​
  • স্বামী-স্ত্রীর যৌথ ছবি​
  • বিয়ের আমন্ত্রণপত্র​

গ) অভিভাবকের মৃত্যুর ক্ষেত্রে:

  • মৃত্যু সনদ বা স্থানীয় চেয়ারম্যানের প্রত্যয়নপত্র​
  • নতুন অভিভাবকের সম্মতিপত্র​
  • নতুন অভিভাবকের পেশা ও কর্মস্থল সংক্রান্ত কাগজপত্র​
  • নতুন অভিভাবকের জাতীয় পরিচয়পত্র​

ঘ) প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীর ক্ষেত্রে:

  • সমাজকল্যাণ দপ্তরের প্রতিবন্ধী সনদ​

ঙ) কলেজের অধিভুক্তি বাতিলের ক্ষেত্রে:

  • জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজ পরিদর্শন শাখা কর্তৃক অধিভুক্তি বাতিলের পত্র​

চ) নাম, জন্মতারিখ বা অন্য তথ্য সংশোধিত হলে:

  • বোর্ড কর্তৃক ইস্যুকৃত সংশোধনপত্র (Correction Letter)​

ছ) ধর্ম পরিবর্তনের ক্ষেত্রে (যদি প্রযোজ্য হয়):

  • জেলা ম্যাজিস্ট্রেট কর্তৃক প্রদত্ত এফিডেভিট (Affidavit)​

ডকুমেন্ট প্রস্তুতির টিপস

  • সব ডকুমেন্টের ফটোকপি অবশ্যই সত্যায়িত করে নিন (কলেজ অধ্যক্ষ বা নোটারি পাবলিক থেকে)​
  • মূল ডকুমেন্ট সাথে রাখুন যাচাই করার জন্য​
  • সব কাগজপত্র পরিষ্কার এবং পড়ার যোগ্য হতে হবে
  • অসম্পূর্ণ বা ভুল তথ্য দিলে আবেদন বাতিল হতে পারে​

কলেজ ট্রান্সফার (TC) সংক্রান্ত ফি ও খরচ

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজ ট্রান্সফারের জন্য নির্দিষ্ট পরিমাণ ফি বা আবেদন ফি দিতে হয়। এই ফি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ নির্ধারণ করে থাকে এবং সময়ের সাথে সাথে পরিবর্তন হতে পারে।​

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের টিসি ফি

  • অনার্স টিসি ফি: প্রায় ৮০০ থেকে ১৫০০ টাকা (আনুমানিক)​
  • ডিগ্রি টিসি ফি: প্রায় ৮০০ থেকে ১২০০ টাকা (আনুমানিক)​

গুরুত্বপূর্ণ: সঠিক এবং আপডেট ফি-এর পরিমাণ জানতে অবশ্যই জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট বা নোটিশ দেখুন, কারণ ফি প্রতি বছর পরিবর্তন হতে পারে।

অন্যান্য খরচ

ক) বর্তমান কলেজের বকেয়া:

  • কলেজের সব বকেয়া বেতন পরিশোধ করতে হবে​
  • বিশেষ করে বেসরকারি কলেজের ক্ষেত্রে সব বছরের বেতন দাবি করতে পারে, তবে নিয়ম অনুযায়ী শুধু চলতি বছরের ৬ মাসের বেতন দিতে হয়​
  • লাইব্রেরি ফি বা জরিমানা (যদি থাকে)​

খ) নতুন কলেজের ভর্তি ফি:

  • নতুন কলেজে ভর্তির সময় ভর্তি ফি, সেশন চার্জ, এবং অন্যান্য ফি দিতে হবে​
  • এই ফি কলেজভেদে ভিন্ন হতে পারে (সরকারি ও বেসরকারি কলেজের ফি আলাদা)​

গ) ডকুমেন্ট সত্যায়ন খরচ:

  • সব ডকুমেন্ট সত্যায়ন করতে প্রায় ৫০০-১০০০ টাকা খরচ হতে পারে (নোটারি পাবলিক থেকে)​

ঘ) যাতায়াত ও অন্যান্য:

  • কলেজে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে যাতায়াতের খরচ
  • ফটোকপি, ছবি তোলা, প্রিন্ট ইত্যাদির খরচ

মোট আনুমানিক খরচ: প্রায় ৩০০০ থেকে ৮০০০ টাকা (কলেজ এবং পরিস্থিতি ভেদে ভিন্ন হতে পারে)

টিসি সংক্রান্ত সাধারণ প্রশ্নোত্তর (FAQ)

এখানে কলেজ ট্রান্সফার সংক্রান্ত সবচেয়ে সাধারণ এবং গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নগুলোর উত্তর দেওয়া হলো।

১. টিসি (TC) আবেদন করতে কতদিন সময় লাগে?

প্রাথমিক আবেদন থেকে চূড়ান্ত অনুমোদন পর্যন্ত সাধারণত ৩০-৬০ দিন সময় লাগে। তবে কিছু ক্ষেত্রে আরো বেশি সময় লাগতে পারে যদি ডকুমেন্ট যাচাই বা অন্য কোনো সমস্যা থাকে।​

প্রক্রিয়ার ধাপ অনুযায়ী সময়:

  • অনলাইন প্রাথমিক আবেদন: ১-৩ দিন
  • বিশ্ববিদ্যালয় থেকে SMS পাওয়া: ৭-১৫ দিন​
  • চূড়ান্ত আবেদন জমা ও যাচাই: ১৫-৩০ দিন
  • অনুমোদন পত্র পাওয়া: ৩০-৬০ দিন

টিপ: রেজাল্ট প্রকাশের পরপরই যত দ্রুত সম্ভব আবেদন করুন যাতে ৪৫ দিনের সময়সীমার মধ্যে থাকে।​

২. টিসি আবেদন বাতিল (Reject) হলে করণীয় কী?

যদি আপনার টিসি আবেদন বাতিল বা প্রত্যাখ্যান হয়, তাহলে নিম্নলিখিত পদক্ষেপ নিন:

ক) প্রত্যাখ্যানের কারণ জানুন:

  • জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় সাধারণত SMS বা অনলাইন পোর্টালে প্রত্যাখ্যানের কারণ উল্লেখ করে​
  • কারণ দেখে বুঝুন কোন সমস্যা হয়েছে

খ) সাধারণ প্রত্যাখ্যানের কারণ:

  • অসম্পূর্ণ ডকুমেন্ট: সব কাগজপত্র জমা দেওয়া হয়নি​
  • ভুল তথ্য: আবেদনে ভুল বা মিথ্যা তথ্য দেওয়া হয়েছে​
  • কাঙ্ক্ষিত কলেজে আসন পূর্ণ: নতুন কলেজে খালি আসন নেই​
  • অগ্রহণযোগ্য কারণ: যে কারণ দেখানো হয়েছে তা যথেষ্ট যৌক্তিক নয়​
  • NOC না থাকা: কাঙ্ক্ষিত কলেজের অনাপত্তি পত্র সঠিকভাবে জমা দেওয়া হয়নি​
  • সময়সীমা অতিক্রম: ৪৫ দিনের মধ্যে আবেদন করা হয়নি​

গ) সমস্যা সমাধান:

  • অসম্পূর্ণতা সংশোধন করে পুনরায় আবেদন করতে পারবেন (যদি সময় থাকে)​
  • অন্য কোনো কলেজে TC-এর জন্য আবেদন করতে পারবেন​
  • বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে সরাসরি যোগাযোগ করে বিস্তারিত জানুন

ঘ) পুনর্বিবেচনার আবেদন:

  • যদি মনে করেন প্রত্যাখ্যান অন্যায্য, তাহলে লিখিত আবেদনের মাধ্যমে পুনর্বিবেচনার জন্য আবেদন করতে পারেন

৩. এক জেলা থেকে অন্য জেলায় টিসি নেওয়া যায় কি?

হ্যাঁ, অবশ্যই যায়। এক জেলা থেকে অন্য জেলায় কলেজ পরিবর্তন করা যায় যদি যৌক্তিক কারণ থাকে (যেমন: অভিভাবকের বদলি, বিয়ে ইত্যাদি)।​

তবে মনে রাখবেন:

  • একই জেলার মধ্যে এক কলেজ থেকে অন্য কলেজে যাওয়া যায় না (মেয়ে শিক্ষার্থীদের বিয়ের ক্ষেত্রে ব্যতীত)​
  • এক জেলা থেকে অন্য জেলায় গেলে অবশ্যই প্রমাণযোগ্য কারণ দেখাতে হবে​

৪. সরকারি কলেজ থেকে বেসরকারি কলেজে (বা উল্টো) টিসি নেওয়া যায় কি?

আংশিক:

  • সরকারি থেকে সরকারি: সরকারি কলেজ থেকে অন্য সরকারি কলেজে যাওয়া যায়​
  • সরকারি থেকে বেসরকারি: সরকারি কলেজ থেকে বেসরকারি কলেজেও যাওয়া যায়​
  • বেসরকারি থেকে বেসরকারি: বেসরকারি কলেজ থেকে অন্য বেসরকারি কলেজে যাওয়া যায়​
  • বেসরকারি থেকে সরকারি: বেসরকারি কলেজ থেকে সরকারি কলেজে যাওয়া যায় না​​

এই নিয়মটি কঠোরভাবে প্রয়োগ করা হয় এবং ব্যতিক্রম খুবই কম।​

৫. টিসি অ্যাপ্রুভ (Approve) হয়েছে কিনা কীভাবে বুঝবো?

টিসি অনুমোদন হয়েছে কিনা তা জানার কয়েকটি উপায় আছে:

ক) SMS নোটিফিকেশন:

  • জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় আপনার রেজিস্টার করা মোবাইল নম্বরে SMS পাঠাবে যেখানে জানানো হবে আবেদন অনুমোদিত হয়েছে কিনা​

খ) স্টুডেন্ট পোর্টাল চেক করুন:

  • www.nu.ac.bd বা www.nubd.info এ লগইন করুন
  • "My Application" বা "TC Status" সেকশনে গিয়ে আবেদনের স্ট্যাটাস চেক করুন
  • যদি "Approved" বা "Granted" দেখায়, তাহলে আপনার TC অনুমোদিত হয়েছে

গ) অনুমোদন পত্র ডাউনলোড:

  • অনুমোদন হলে পোর্টাল থেকে TC Approval Letter ডাউনলোড করতে পারবেন

ঘ) বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগাযোগ:

  • সরাসরি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের গাজীপুর অফিসে যোগাযোগ করে জানতে পারবেন
  • ফোন: +880-2-9291016 (রেজিস্ট্রার অফিস)

৬. টিসি প্রক্রিয়া চলাকালীন কি পরীক্ষা দিতে পারবো?

হ্যাঁ, অবশ্যই পারবেন। টিসি প্রক্রিয়া চলাকালীন আপনি আপনার বর্তমান কলেজে নিয়মিত ক্লাস ও পরীক্ষা চালিয়ে যেতে পারবেন। টিসি অনুমোদিত না হওয়া পর্যন্ত আপনি বর্তমান কলেজের শিক্ষার্থী হিসেবেই গণ্য হবেন।​

৭. টিসি পাওয়ার পর কি আগের কলেজের রেজাল্ট বাতিল হয়ে যাবে?

না, একদম না। আপনার আগের সব রেজাল্ট এবং একাডেমিক রেকর্ড বহাল থাকবে। শুধুমাত্র আপনার কলেজ পরিবর্তন হবে কিন্তু রেজিস্ট্রেশন নম্বর একই থাকবে এবং সব পরীক্ষার ফলাফল জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের রেকর্ডে সংরক্ষিত থাকবে।​

৮. টিসির জন্য কি CGPA বা নির্দিষ্ট গ্রেড লাগে?

না, নির্দিষ্ট কোনো CGPA বা মিনিমাম গ্রেড লাগে না। শুধুমাত্র সংশ্লিষ্ট বর্ষের পরীক্ষায় "Promoted" (প্রমোটেড) হলেই যথেষ্ট। এমনকি কোনো বিষয়ে ফেল থাকা সত্ত্বেও যদি প্রমোশন পাওয়া যায়, তাহলেও টিসির জন্য আবেদন করা যায়।​

৯. টিসি প্রক্রিয়া কি সম্পূর্ণ অনলাইনে হয়?

আংশিকভাবে অনলাইন। প্রাথমিক আবেদন এবং পেমেন্ট সম্পূর্ণ অনলাইনে হয় কিন্তু চূড়ান্ত আবেদনের কাগজপত্র সরাসরি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে জমা দিতে হয় অথবা পোস্টের মাধ্যমে পাঠাতে হয়। এছাড়া নতুন কলেজ থেকে NOC এবং বর্তমান কলেজ থেকে ছাড়পত্র নেওয়ার জন্য সরাসরি যোগাযোগ করতে হয়।​

১০. একবার টিসি নিলে কি আবার আগের কলেজে ফিরতে পারবো?

সাধারণত না। একবার টিসি নিয়ে নতুন কলেজে চলে গেলে পুনরায় আগের কলেজে ফেরার সুযোগ নেই। তবে বিশেষ পরিস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে হতে পারে, তবে সেটি অত্যন্ত কঠিন এবং অস্বাভাবিক।​

চূড়ান্ত পরামর্শ

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে কলেজ ট্রান্সফার বা টিসি (TC) নেওয়া একটি গুরুত্বপূর্ণ এবং সিরিয়াস প্রক্রিয়া যা সঠিক নিয়ম মেনে এবং যৌক্তিক কারণ সহকারে করতে হয়। এই বিস্তারিত গাইডে আমরা টিসি সংক্রান্ত সব কিছু আলোচনা করেছি— কী, কেন, কীভাবে, কারা, এবং কখন।​

সফল টিসির জন্য চূড়ান্ত পরামর্শ

১. পরিকল্পনা করুন আগে থেকেই:

  • রেজাল্ট প্রকাশের পরপরই টিসির জন্য পরিকল্পনা শুরু করুন কারণ মাত্র ৪৫ দিন সময় পাবেন​
  • সব কাগজপত্র আগে থেকে প্রস্তুত রাখুন​

২. যৌক্তিক কারণ নিশ্চিত করুন:

  • টিসির জন্য শক্তিশালী এবং প্রমাণযোগ্য কারণ থাকা অত্যন্ত জরুরি​
  • মামুলি বা ব্যক্তিগত পছন্দের কারণে টিসি হয় না​

৩. NOC সংগ্রহ অগ্রাধিকার দিন:

  • কাঙ্ক্ষিত কলেজ থেকে অনাপত্তি পত্র (NOC) সংগ্রহ করা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ​
  • NOC ছাড়া টিসি হবে না​

৪. ডকুমেন্ট সঠিকভাবে প্রস্তুত করুন:

  • সব ডকুমেন্ট সত্যায়িত করে নিন​
  • অসম্পূর্ণ বা ভুল তথ্য দিলে আবেদন বাতিল হবে​

৫. সময়সীমা মেনে চলুন:

  • রেজাল্ট প্রকাশের ৪৫ দিনের মধ্যে অবশ্যই প্রাথমিক আবেদন করুন​
  • দেরি করলে সুযোগ হারাবেন​

৬. নিয়মিত ফলোআপ করুন:

  • আবেদনের পর নিয়মিত স্টুডেন্ট পোর্টালে চেক করুন​
  • বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে যোগাযোগ রাখুন​

৭. বকেয়া টাকা পরিশোধ করুন:

  • বর্তমান কলেজের সব বকেয়া বেতন সময়মতো পরিশোধ করুন​
  • টাকা বাকি থাকলে ছাড়পত্র পাবেন না​

৮. ধৈর্য ধরুন:

  • পুরো প্রক্রিয়ায় ৩০-৬০ দিন সময় লাগতে পারে​
  • তাড়াহুড়ো না করে সঠিক পদ্ধতি অনুসরণ করুন​

মনে রাখার মতো গুরুত্বপূর্ণ তথ্য

  • টিসি একটি অনলাইন এবং স্বচ্ছ প্রক্রিয়া​
  • কোনো অবৈধ পথে প্রভাবিত করা সম্ভব নয়​
  • সরকারি ও বেসরকারি সকল কলেজ থেকে প্রাপ্ত ডিগ্রির মান সমান​
  • মার্কশিট এবং সার্টিফিকেটে কলেজের নাম থাকলেও ফাইনাল সার্টিফিকেটে শুধু জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম থাকবে​

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট www.nu.ac.bd এবং www.nubd.info

 এ নিয়মিত ভিজিট করুন সর্বশেষ নোটিশ এবং আপডেটের জন্য। যেকোনো সমস্যার জন্য সরাসরি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে যোগাযোগ করুন বা আপনার কলেজের অধ্যক্ষের পরামর্শ নিন।​

আপনার একাডেমিক জীবনের সফলতা কামনা করছি। এই গাইড অনুসরণ করে আপনি সহজেই এবং সঠিকভাবে কলেজ ট্রান্সফার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে পারবেন। শুভকামনা রইল!

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় অনার্স রেজাল্ট দেখার সম্পূর্ণ নিয়ম ২০২৫-২০২৬

magnifiercrosschevron-down linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram